সম্ভাব্য ঝুঁকি’তে সচেতন ছিলেন না টিউলিপ
‘দুঃখজনক হাসিনাকে নিয়ে
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের নীতিবিষয়ক উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাস এক চিঠিতে উল্লেখ করেছেন যে, টিউলিপ সিদ্দিক তার পরিবারের সঙ্গে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার 'সম্ভাব্য ঝুঁকি' সম্পর্কে সচেতন ছিলেন না, যা 'দুঃখজনক'।
টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে বিতর্কিত সম্পত্তি প্রসঙ্গ
টিউলিপ সিদ্দিক, যিনি ব্রিটিশ সংসদের একজন প্রভাবশালী সদস্য এবং বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয়, সম্প্রতি তার সম্পত্তি এবং পারিবারিক সংযোগ নিয়ে বিতর্কের মুখোমুখি হয়েছেন। এর মধ্যে মূলত তার মালিকানাধীন কিংস ক্রসের একটি ফ্ল্যাট এবং এর ক্রয় প্রক্রিয়া ঘিরে তৈরি হয়েছে প্রশ্ন।
বিতর্কের সূচনা
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে দাবি করা হয়েছে যে, ফ্ল্যাটটি যে অর্থায়নে ক্রয় করা হয়েছে তার উৎস বাংলাদেশে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে আসতে পারে। টিউলিপ সিদ্দিক প্রথমে দাবি করেছিলেন, ফ্ল্যাটটি তার বাবা-মা তাকে উপহার হিসেবে দিয়েছেন। কিন্তু পরে দেখা যায়, তিনি ফ্ল্যাটটির মালিকানা বদল প্রক্রিয়ায় সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন এবং একটি ভূমি রেজিস্ট্রি ফরমে স্বাক্ষর করেছিলেন।
মন্ত্রিত্বের আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ
ব্রিটেনের মন্ত্রিত্ব আচরণবিধি অনুযায়ী, একজন সংসদ সদস্যের ওপর নির্ভরযোগ্যতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও স্যার লরি ম্যাগনাসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, টিউলিপ সিদ্দিক মন্ত্রিত্বের আচরণবিধি ভঙ্গ করেননি, তবে তার সম্পত্তির উৎস ও এর সঙ্গে তার পরিবারের সম্পৃক্ততা নিয়ে পর্যাপ্ত সচেতনতা না থাকা "দুঃখজনক" বলে মন্তব্য করা হয়েছে।
কনজারভেটিভ পার্টির চাপ
এই পরিস্থিতিতে বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টি তার পদত্যাগের দাবি তুলেছে। তারা বলছে, টিউলিপ সিদ্দিকের সম্পদের উৎস নিয়ে জনগণের সামনে আরও স্বচ্ছতা প্রয়োজন। একইসঙ্গে তারা যুক্তরাজ্যের আর্থিক খাতের জন্য তার দায়িত্ব পালনের উপযুক্ততা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
প্রধানমন্ত্রী রিশি সুনাকের প্রতিক্রিয়া
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রিশি সুনাকের দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, তিনি বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। তবে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
টিউলিপ সিদ্দিকের প্রতিক্রিয়া
টিউলিপ সিদ্দিক বলেছেন যে, তিনি এই বিতর্কে “অপরাধমূলক কোনো ভুল” করেননি এবং তার সম্পত্তি সংক্রান্ত তথ্য জনগণের কাছে প্রকাশ করেছেন। তার দাবি, এটি একটি ভুল বোঝাবুঝি, যা তিনি দ্রুত ঠিক করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এ ধরনের পরিস্থিতি রাজনীতিকদের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং স্বচ্ছতার গুরুত্বকে নতুন করে স্মরণ করিয়ে দেয়। জনগণের কাছে পুরো সত্য উন্মোচন করাই এ ধরনের বিতর্ক থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায়।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ–অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে আশ্রয় নেন। দুর্নীতি ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বাংলাদেশের আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের অর্থায়নে ক্রয় করা সম্পত্তি থেকে টিউলিপ সিদ্দিক সুবিধা পেয়েছেন—এমন খবর ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত হয়েছে।এরপর টিউলিপের পদত্যাগের দাবি তোলে বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টি।
স্যার লরি ম্যাগনাস চিঠিতে আরও উল্লেখ করেন, টিউলিপ সিদ্দিক স্বীকার করেছেন যে, দীর্ঘ সময় ধরে তিনি কিংস ক্রসে কীভাবে ফ্ল্যাটের মালিক হলেন সে সম্পর্কে অজ্ঞ ছিলেন।যদিও সম্পত্তি হস্তান্তরের সময় তিনি একটি ভূমি রেজিস্ট্রি ট্রান্সফার ফরমে স্বাক্ষর করেছিলেন।তবে তিনি মনে করেছিলেন, তার বাবা–মা ফ্ল্যাটটি তাকে উপহার দিচ্ছেন এবং পূর্বের মালিকের কাছ থেকে এটি কেনা হয়েছে।
ফলে ২০২২ সালে এক প্রশ্নের জবাবে টিউলিপ 'অনিচ্ছাকৃতভাবে' সম্পত্তির দাতার পরিচয় নিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করেছেন।এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল বোঝাবুঝি ছিল, যার ফলে মন্ত্রী হওয়ার পর তিনি তার মালিকানাধীন সম্পত্তির উৎস সম্পর্কে জনসম্মুখে সংশোধনী দেন।
ম্যাগনাস আরও বলেন, টিউলিপ সিদ্দিক মন্ত্রিত্বের আচরণবিধি ভঙ্গ করেননি।তবে যুক্তরাজ্যের আর্থিক খাতের প্রচার ও এর নিয়ন্ত্রক কাঠামোর সততা বিষয়ক মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব থেকে এ ধরনের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন না থাকাটা 'দুঃখজনক'
তিনি আরও উল্লেখ করেন, টিউলিপ সিদ্দিকের মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব ও বাংলাদেশের সাবেক সরকারের সঙ্গে তার পরিবারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ঝুঁকি সম্পর্কে আরও সতর্ক থাকা উচিত ছিল।যদিও এটি মন্ত্রিসভার আচরণবিধির লঙ্ঘন নয়, তবে প্রধানমন্ত্রী তার বর্তমান দায়িত্বগুলো এ আলোকে বিবেচনা করতে পারেন।
নতুন আইডিয়ারনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url