আল্লাহর পরিচয়-আল্লাহর পরিচয়ের জন্য আত্মপরিচয়ের প্রয়োজনীয়তা
আল্লাহর পরিচয়ের জন্য আত্মপরিচয়ের প্রয়োজনীয়তা
পোস্টসূচিপত্র:নবী-রাসূলদের আসমানী গ্রন্থেও উল্লেখ রয়েছে যে, আল্লাহ তাদেরকে বলেছেন, “আত্মপরিচয় লাভ করতে পারলে তুমি তোমার প্রভুর পরিচয় পেয়ে যাবে।” এ সম্পর্কে পূর্বযুগের বুযর্গগণও বলেছেন যে, যে ব্যক্তি নিজেকে চিনতে পেরেছে, সে তার প্রতিপালক আল্লাহকে চিনেছে। এসব উক্তি দ্বারা বুঝা যায় যে, মানুষের আত্মা আয়নার ন্যায় স্বচ্ছ। গভীরভাবে আত্মার দিকে দৃষ্টিপাত করলে আল্লাহ পাককে দেখতে পাওয়া যায়। অবশ্য অনেকে নিজের প্রতি গভীরভাবে লক্ষ্য করেও আল্লাহর পরিচয় পায়নি তার কারণ হল, তাদের আত্মপরিচয়ই পূর্ণতা লাভ করেনি। নিজ আত্মার মাঝে আল্লাহর ছবি প্রতিফলিত হওয়ার জন্য আত্মার পরিচয় পূর্ণরূপে হতে হবে।
তত্ত্ব দর্শনের সংজ্ঞা ও তা অনুধাবনের উপায় :
আল্লাহ তায়ালার পরিচয়
আয়ত্ত করাকে
বলা হয়
তত্ত্ব দর্শন
বা মারেফাতে
ইলাহী ।
এখানে আমরা
একে তিনটি
ভাগে বিভক্ত
করব। যথা
: (১) সত্তা সংক্রান্ত জ্ঞান
(২) গুণাবলি সংক্রান্ত জ্ঞান
এবং (৩)
কার্যাবলি সংক্রান্ত
জ্ঞান; মোটকথা
আল্লাহ পাকের
পরিচয় লাভের
জন্য তাঁর
সত্তা, গুণ
এবং কার্যাবলি
সংক্রান্ত জ্ঞান
লাভ করা
দরকার। মানুষ
নিজের সত্তা
সংক্রান্ত পূর্ণজ্ঞান
লাভ করতে
পারলে আল্লাহ
পাকের সত্তা
সংক্রান্ত জ্ঞান
অর্জন করতে
পারে। নিজের
গুণাবলি দেখে
আল্লাহ পাকের
গুণাবলি অনুধাবন
করতে পারে।
নিজের কার্যাবলির
প্রতি লক্ষ্য
করে আল্লাহর
কার্যাবলি উপলব্ধি
করতে পারে।
মানবদেহরূপ এ
ক্ষুদ্র রাজ্যের
উপর মানবাত্মারূপ
বাদশাহর প্রভুত্ব
ও কার্যক্রম যেভাবে
পরিচালিত হয়,
সমগ্র জগতের
উপর জগতের
অধিপতি আল্লাহ
পাকের প্রভুত্ব
ও কার্যাবলি তদ্রূপই
চলে ।
(ক) আল্লাহর সত্তা সংক্রান্ত জ্ঞান :
মানুষ নিজের সত্তার
প্রতি লক্ষ্য
করে আল্লাহর
সত্তা সংক্রান্ত
জ্ঞান কিভাবে
উপলব্ধি করতে
পারে প্রথমে
তা-ই
আলোচনা করা
হচ্ছে। নিজের
সত্তার প্রতি
লক্ষ্য করলেই
মানুষ অনুধাবন
করতে। পারে
যে, এক
সময় তার
কোন চিহ্নই
ছিল না।
খোদ আল্লাহ তায়ালা এ সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন :
هَلْ هل أنى عَلَى الإِنْسَانِ حِينٌ مِّنَ الدَّهْرِ لَمْ يَكُنْ نَبْنا
A
مذكورًا - إِنَّا خَلَقْنَا الإِنْسَانَ مِنْ نُّطْفَةٍ أَمْتَاجِ نَّبْتَلِيْهِ
فَجَعَلْنَاهُ سَمِيعًا بَصِيرًا
অর্থাৎ মানুষের উপর কি এমন একটি সময় অতিক্রান্ত হয়নি? যখন যে কোন উল্লেখযোগ্য বস্তুই ছিল না। নিশ্চয় আমি মানুষকে সম্মিলিত শুক্রবিন্দু দিয়ে সৃষ্টি করেছি পরীক্ষা করার লক্ষ্যে। তারপর আমি তাকে বানিয়েছি শ্রবণকারী ও দর্শনকারী ।
সূচনায় মানুষ একটি বীর্য বিন্দুমাত্র ছিল। তাতে দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণ শক্তি, বুদ্ধি-জ্ঞান, মস্তক, হাত, পা, চোখ, জিহ্বা, স্নায়ু, অস্থি, মাংস, হাড্ডি, চর্ম প্রভৃতি কিছুই ছিল না। পরে তার মধ্যে উক্ত আবশ্যকীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও বিচিত্র কৌশলময় ইন্দ্রিয়গুলো ক্রমে ক্রমে সংযুক্ত এবং সন্নিবেশিত করা হয়েছে। ভেবে দেখার বিষয় যে, পরবর্তী পর্যায়ে সৃজিত ও সংযোজিত বস্তুগুলো কি সেই শুক্রের নিজেরই সৃষ্টি, না কোন স্রষ্টা স্বীয় অসীম ক্ষমতা বলে ঐসব সৃষ্টি করেছেন? প্রাথমিক পর্যায়ে তো মানুষ একবিন্দু বীর্য মাত্র ছিল, এখন যদিও সে সর্বাঙ্গীণ মানবে পরিণত হয়েছে, তবু সে একগাছি চুল সৃষ্টি করতে সক্ষম নয় । এর দ্বারাই বুঝা যাচ্ছে যে, যখন সে কেবল বীর্য মাত্র ছিল, তখন তো সে অধিকতর অক্ষম এবং দুর্বল ছিল, সুতরাং তখন তার নিজের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সৃষ্টি করা তার দ্বারা কোন রূপেই সম্ভব ছিল না। বিষয়টি চিন্তা করলে মানুষ সহজেই বুঝে নেবে যে, এক মহাশক্তিশালী স্রষ্টা মানুষকে অনস্তিত্বের জগত থেকে অস্তিত্বের জগতে নিয়ে এসেছেন এভাবে মানুষ আত্মপরিচয় লাভ দ্বারা স্রষ্টার সত্তা বা অস্তিত্বের পরিচয়োপলব্ধি করতে পারে।
(খ) আল্লাহর গুণ সংক্রান্ত জ্ঞান : মানুষ নিজের গুণসমূহ ও ক্ষমতার প্রতি লক্ষ্য করলে আল্লাহ তায়ালার অশেষ গুণাবলি অনুধাবন করতে পারে। এখানে আল্লাহর কতিপয় বিশেষ গুণ সংক্রান্ত আলোচনার দ্বারা তাঁর গুণাবলির পরিচয় পেশ করা হচ্ছে।আল্লাহর কুদরত ও ক্ষমতা : মানুষ নিজ দেহের বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গাদি ও আভ্যন্তরীণ যন্ত্রগুলোর বিচিত্র গঠন এবং বিস্ময়কর কার্যক্রমের প্রতি লক্ষ্য করলে আল্লাহর অপার ক্ষমতা নজরে আসবে এবং বুঝতে পারবে যে, এ বিচিত্র মানবদেহের কুশলী স্রষ্টা অসীম ক্ষমতাশালী। তিনি যা যেমন ইচ্ছা সৃষ্টি করতে পারেন। আরও এও উপলব্ধি করা যাবে যে, এক ফোঁটা শুক্রের মাধ্যমে তিনি কী বিচিত্র সৌষ্ঠবপূর্ণ ও সৌন্দর্যময় মানব দেহই সৃষ্টি করেছেন। এর প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাঝে কী অপূর্ব সৃষ্টি নৈপুণ্য ও কৌশল প্রদর্শন করেছেন । এটাই তো তাঁর শ্রেষ্ঠ ক্ষমতার অন্যতম পরিচয় ।
আল্লাহর অফুরন্ত জ্ঞান : মানুষ নিজ দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গাদির সাহায্যে আল্লাহ পাকের অফুরন্ত গুণাবলির পরিচয় লাভ করতে পারে। মানুষ নিজের আশ্চর্য কার্যক্রম এবং স্বীয় অঙ্গ-প্রত্যাঙ্গাদির উপকারিতার প্রতি গভীর মনোযোগের সাথে লক্ষ্য করে যখন তার হাত-পা, চোখ-কান-নাক, জিহ্বা দাঁত তাছাড়া যকৃত, প্লীহা, হৃদপিণ্ড, পিত্ত প্রভৃতির সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বুঝতে পারবে, তখন সে অনুধাবন করতে পারবে যে, স্রষ্টা-আল্লাহ তায়ালার জ্ঞাত কত পূর্ণ এবং ব্যাপক । ইহ-পরলোকের কোন বিষয় বা বস্তুই তাঁর জ্ঞান বহির্ভূত নয় । সুতরাং আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি জ্ঞান যে একেবারে পূর্ণ ও অতুলনীয় তাতে কোন সন্দেহ নেই । তাঁর যে কোন কিছুর সৃষ্টি কার্যে এতটুকু মাত্র ত্রুটি নেই। সারা বিশ্বের নিপুণ ও বিজ্ঞ শিল্পীদেরকে সমবেত করে যদি বলা হয়, আল্লাহ তায়ালা যেভাবে মানবদেহের বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও আভ্যন্তরীণ যন্ত্রাদি নির্মাণ এবং সংযোজন করেছেন; তোমরা গবেষণাদির দ্বারা তদপেক্ষা উত্তম কোন প্রণালী উদ্ভাবন কর । তাহলে একাজের জন্য তাদের আয়ু দীর্ঘ করে দেয়া হলেও তারা তাতে সক্ষম হবে না; বরং তারা আল্লাহ তায়ালার প্রণালীর তুলনায় উত্তম কোন প্রণালীর সন্ধান পাবে না। আল্লাহ তায়ালা মানুষের দন্ত পাটিকে কী সুন্দর পদ্ধতিতে সংস্থাপন করেছেন। খাদ্যবস্তু চূর্ণ করার জন্য সামনের উভয় পাটির কয়েকটি দাঁতকে তীক্ষ্ণ ও সরু করেছেন। তারপরও উক্ত চূর্ণিত খাদ্য বস্তুকে চর্বন এবং সম্পূর্ণ গুঁড়ো করার জন্য পাশের দত্তগুলো বিস্তৃত ও সুদৃঢ় করেছেন। যাঁতায় আটা পেষা সদৃশ এগুলোর কাজ। দাঁতের নিকটস্থ জিহ্বা দাঁতের মাঝে শস্য নিক্ষেপকারী যন্ত্রের কাজ করে এবং জিহ্বার নিম্নস্থলের লালা নির্গতকারী শক্তি ছানা তৈয়ারকারী ও আটার মধ্যে পানি সিঞ্চনকারী তুল্য কাজ করে। এই শক্তি
চর্বিত খাদ্যদ্রব্যকে সিক্ত করার জন্য প্রয়োজন অনুরূপ লালার যোগান দিয়ে থাকে। যার ফলে খাদ্যদ্রব্য তাতে তরল হয়ে অনায়াসে উদরাভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে। সারাজগতের সব শিল্পী একযোগে জীবনভর গবেষণা করেও আল্লাহ পাক যে পদ্ধতিতে দন্তপাটি ও জিহ্বাকে সংস্থাপন করেছেন, তদপেক্ষা উৎকৃষ্ট অন্য কোন পদ্ধতি আবিষ্কার করতে সক্ষম হবে না; বরং যতই গবেষণা করুক না কেন তাদের নিকট স্পষ্ট হয়ে উঠবে যে, আল্লাহর এ পদ্ধতি ছাড়া অন্য যে কোন পদ্ধতিই গ্রহণ করা হোক না কেন, তা মানুষের সুবিধার স্থলে বরং অসুবিধার কারণ ঘটাবে ।
হাতের পাঁচটি আঙ্গুলের দিকে লক্ষ্য কর। তার চারটি এক সারিতে এবং আর একটি অর্থাৎ বৃদ্ধাঙ্গুলিটি ওগুলো থেকে বেশ কিছু দূরে অবস্থিত। এটা অন্যগুলোর তুলনায় খাট হলেও অন্য প্রত্যেকটি আঙ্গুলের সাথে একত্রে কাজ করে তাতে কোনই অসুবিধা হয় না। অন্য প্রত্যেকটি আঙ্গুলে তিনটি করে গ্রন্থি রয়েছে কিন্তু বৃদ্ধাঙ্গুলটিতে তা দুটি। আঙ্গুলগুলো এক বিশেষ পদ্ধতিতে সাজানো বলেই এদের সাহায্যে খুব সহজে এবং স্বচ্ছন্দে যে কোন বস্তু ধারণ এবং উত্তোলন করা যায়। এগুলোর দ্বারা খাদ্যদ্রব্য ধরে তুলে মুখে দেয়া যায়, আবার প্রয়োজনে মুষ্টিবদ্ধ করে হামলাকারী শত্রুকে মুষ্ট্যাঘাত করা যায়। আবার এরই দু-তিনটির দ্বারা কলম ধরে লিখন কার্য সম্পন্ন করা যায়। মোটকথা এ আঙ্গুলগুলোর ছোট-বড় আকৃতিবিশিষ্ট করা, বিশেষ পদ্ধতিতে সজ্জিত ও সংস্থাপিত করা সবকিছুর পেছনে বহু উদ্দেশ্য রয়েছে। যদি আঙ্গুলগুলোর সজ্জিতকরণ এবং সংস্থাপনে এতটুকু গড়মিল হতো বা এর বিপরীত কোন পদ্ধতি গ্রহণ করা হতো, তাহলে যে উদ্দেশ্যে এগুলো তৈরী হয়েছে তা সফল হতো না অথবা নানাবিধ সমস্যা দেখা দিতো। এর দ্বারাই বুঝা যায় যে, শুধু দাঁত এবং অঙ্গুলি নয়; বরং শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের যেটি যেরূপ হওয়া দরকার, তা সংস্থাপনে যে প্রণালী গ্রহণ করা প্রয়োজন নিপুণ স্রষ্টা আল্লাহ তায়ালা ঠিক তদ্রূপই করেছেন। এদিকে লক্ষ্য করলে মহান স্রষ্টার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা যে অশেষ ও অপরিসীম তা সহজেই অনুভব করা যায় ।
নতুন আইডিয়ারনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url